Post office RD Scheme: মাত্র ₹৩৩৩ করে জমালে ১০ বছরে হাতে পাবেন ১৭ লক্ষ টাকা!

আজকের দিনে সঞ্চয় মানেই শুধু টাকা জমানো নয়, বরং ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকি থাকলেও, পোস্ট অফিসের বিভিন্ন স্মল সেভিংস স্কিম সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য। পোস্ট অফিসে খুবই সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করে আপনি কয়েক বছর পরে মোটা অংকের রিটার্ন পেতে পারেন।

Post office RD Scheme
Post office RD Scheme

এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকল্পগুলির একটি হলো পোস্ট অফিস রিকরিং ডিপোজিট (RD) স্কিম। কম টাকায় শুরু করা যায়, নিয়মিত জমা রাখলে কয়েক বছরের মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা হাতে আসে। এখানে মাসে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করেও শুরু করা যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখানে প্রতিদিন অল্প অল্প টাকা জমা করলে মেয়াদ শেষে মোটা অংকের রিটার্ন পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন মাত্র ₹৩৩৩ টাকা জমিয়েই ১০ বছরে প্রায় ₹১৭ লক্ষ টাকা পাওয়া সম্ভব।

পোস্ট অফিস RD স্কিম কী?

রিকরিং ডিপোজিট মানে হলো প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখা। এর বিনিময়ে পোস্ট অফিস সুদ দেয় এবং ম্যাচিউরিটির সময় মূলধনের সঙ্গে সুদ যোগ হয়ে একটি বড় অঙ্ক হাতে আসে।

  • ন্যূনতম জমা: মাসে মাত্র ₹১০০
  • সুদের হার (২০২৫ অনুযায়ী): ৬.৭% বার্ষিক (কোয়ার্টারলি কম্পাউন্ডিং) এখানে খুব অল্প দিনে টাকা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়।
  • মেয়াদ: ৫ বছর (চাইলে বাড়ানো যায় আরও ৫ বছর)
  • কারা খুলতে পারবেন: প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, অভিভাবকের মাধ্যমে নাবালক সন্তানের নামেও খোলা যায়।

মেয়াদ ও নমনীয়তা

এই স্কিমের স্থায়ী মেয়াদ ৫ বছর। তবে চাইলে জমাদাতা আরও ৫ বছরের জন্য বাড়াতে পারেন। অর্থাৎ, মোট ১০ বছরের জন্য সঞ্চয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। সব থেকে বড় কথা হল আপনি যত বেশি দিনের জন্য টাকা রাখবেন তত বেশি রিটার্ন পাবেন।

  • ৩ বছর পর জরুরি প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সুযোগ রয়েছে।
  • মৃত্যুর ক্ষেত্রে নমিনি টাকা পেয়ে যাবেন বা চাইলে অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে পারবেন।

টাকা জমার নিয়ম

পোস্ট অফিস RD তে মাসে একবার টাকা জমা দিতে হয়। নিয়ম হলো—

  • মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলা হলে পরবর্তী মাসগুলোতেও ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে।
  • যদি মাসের ১৬ তারিখের পরে খোলা হয়, তবে প্রত্যেক মাসের ১৬ থেকে মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে টাকা জমা দিতে হবে।

প্রতিদিন ₹৩৩৩ সঞ্চয়ের হিসাব

এবার দেখা যাক কীভাবে প্রতিদিন ₹৩৩৩ জমালে ১০ বছরে ₹১৭ লক্ষ টাকা হতে পারে।

  • প্রতিদিন সঞ্চয়: ₹৩৩৩
  • মাসে সঞ্চয়: প্রায় ₹১০,০০০
  • বছরে সঞ্চয়: ₹১,২০,০০০
  • ৫ বছরে মোট বিনিয়োগ: ₹৬,০০,০০০
  • সুদসহ ম্যাচিউরিটি: প্রায় ₹৭,১৩,০০০

যদি আরও ৫ বছর চালানো হয়—

  • ১০ বছরে মোট বিনিয়োগ: ₹১২,০০,০০০
  • সুদ (৬.৭% হারে): প্রায় ₹৫,০৮,৫৪৬
  • মোট ম্যাচিউরিটি ভ্যালু: প্রায় ₹১৭,০৮,৫৪৬

অর্থাৎ, ১০ বছর ধরে প্রতিদিন সামান্য টাকা জমালে ১৭ লক্ষ টাকার সঞ্চয় তৈরি হবে।

কম টাকায়ও সম্ভব সঞ্চয়

যদি কেউ মাসে ₹১০,০০০ জমাতে না পারেন, তবে কম টাকায়ও এই স্কিমে বিনিয়োগ সম্ভব। যেমন—

  • মাসে ₹৫,০০০ জমালে ১০ বছরে মোট বিনিয়োগ হবে ₹৬,০০,০০০।
  • সুদসহ ম্যাচিউরিটির সময় হাতে আসবে প্রায় ₹৮.৫৪ লক্ষ টাকা।
  • এর মধ্যে প্রায় ₹২.৫৪ লক্ষ টাকা হবে শুধুমাত্র সুদ।

অর্থাৎ, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

কেন এই স্কিম নিরাপদ?

  • পোস্ট অফিসের সমস্ত স্কিম সরাসরি ভারত সরকারের দ্বারা গ্যারান্টিড। তাই এটি পুরোপুরি নিরাপদ।
  • বাজারের ওঠা-নামার উপর নির্ভর করে না। এর ফলে এখানে কোন রকম ঝুঁকি নেই।
  • সুদের হার স্থির থাকে, তাই আগেভাগেই বুঝে নেওয়া যায় কত টাকা রিটার্ন পাওয়া যাবে।
  • সাধারণ মানুষকে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

কার জন্য উপযোগী?

  • যারা ঝুঁকি ছাড়া সঞ্চয় চান। অল্প দিনে নিশ্চিত রিটার্ন পেতে চান।
  • যারা সন্তানের শিক্ষা বা ভবিষ্যৎ খরচের জন্য ফান্ড তৈরি করতে চান।
  • যারা অবসরের পরে নিরাপদ অঙ্ক চান।
  • ছোট ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী বা গৃহিণী – সকলের জন্যই এটি একটি সহজ সঞ্চয় প্রকল্প।

অন্যান্য স্মল সেভিংস স্কিমের মতো এখানে সরাসরি আয়কর ছাড় নেই। তবে ম্যাচিউরিটি ভ্যালু সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত। তাই যারা শুধু সেফ সেভিংস ও গ্যারান্টিড রিটার্ন চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ।

পোস্ট অফিসের রিকরিং ডিপোজিট স্কিম (RD) হল এক দুরন্ত সঞ্চয় মাধ্যম। প্রতিদিন মাত্র ₹৩৩৩ টাকা জমিয়েই ১০ বছরে প্রায় ₹১৭ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। এতে যেমন সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হয়, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে বড় অঙ্ক হাতে আসে।

যারা ঝুঁকি ছাড়াই ভবিষ্যৎ গড়তে চান, তাদের জন্য পোস্ট অফিস RD নিঃসন্দেহে একটি স্মার্ট ও নিরাপদ ফিনান্সিয়াল ডিসিশন।

Leave a Comment