DA Case Update 2025: সরকারি কর্মীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো, সুপ্রিম কোর্টে বড় শুনানি

অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হল। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বহুদিনের দাবি ডিএ (Dearness Allowance) মামলার শুনানি ঘিরে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন পর্যন্ত একাধিকবার পিছিয়েছে মামলার শুনানি। তবে এবার নির্ধারিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তারিখ— আগামী সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আর অপেক্ষা নয় এবার বকেয়া DA দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হল।

সেইদিন দুপুর দু’টোয় সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রর বেঞ্চে উঠতে চলেছে এই মামলা। সরকারি কর্মীদের আশা, এদিনই মামলার নিষ্পত্তি হবে এবং তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।

আদালতে কারা কারা সওয়াল করবেন?

রাজ্যের হয়ে এই মামলায় সওয়াল করার কথা ছিল দুই বর্ষীয়ান আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং কপিল সিব্বল-এর। তবে শোনা যাচ্ছে, কপিল সিব্বল আরও দু’দিন সময় চেয়েছেন সওয়ালের জন্য। সেই কারণেই শুনানি আরও একবার পিছিয়েছে। তবে এটাই শেষ এবং এবার ফাইনাল ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, সরকারি কর্মীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর পক্ষ থেকে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন— মামলার শুনানি ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই আর সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। এবার রাজ্য সরকারকে সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য DA দিতে হবে।

বিকাশবাবুর কথায়,

“আমরা স্পষ্ট বলেছি, শুনানি শেষ। এখন আর দু’দিনের দরকার কী? আদালত চাইলে সোমবারই মামলার চূড়ান্ত রায় দিতে পারে।”

 সরকারি কর্মীদের প্রতীক্ষার দিন

একাধিকবার শুনানি পিছোনোর কারণে এখন দিন গুনছেন রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। তাদের আশা, এই সোমবারই আসতে চলেছে চূড়ান্ত রায়। আদালত যদি এবার পূর্ণাঙ্গ ডিএ প্রদানের নির্দেশ দেয়, তবে লাখ লাখ কর্মচারীর দীর্ঘ আন্দোলনের অবসান হবে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারি কর্মীরা এর জন্য আন্দোলন অনশন করে যাচ্ছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ

প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল— রাজ্য সরকারকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া ডিএর ২৫% মেটাতে হবে

কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ পালন না করে বরং পাল্টা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। রাজ্য সরকার জানিয়েছে তারা এই টাকা দিতে অক্ষম। এতে ক্ষোভ বেড়েছে সরকারি কর্মীদের মধ্যে। অনেকের মতে, এই মামলায় বারবার সময়ক্ষেপণ করে কেবল কর্মীদের আশা ভঙ্গ করা হচ্ছে।

 সরকারি কর্মীদের দাবি

সরকারি কর্মীদের সবচেয়ে বড় দাবি— ১০০% ডিএ মিটিয়ে দেওয়া হোক। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় কর্মীরা যে হারে ডিএ পান, পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরাও সেই হারে পাওয়ার অধিকারী।

তাদের বক্তব্য:

  • ডিএ কোনো দয়া নয়, এটি একটি অধিকার
  • বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ডিএ জরুরি।
  • সমান কাজের জন্য সমান বেতন নীতি বজায় রাখতে হবে।

ডিএ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের আন্দোলন নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছর ধরে কর্মীরা রাস্তায় নেমে বারবার আন্দোলন করেছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, ধর্না, এমনকি ধর্মঘটও হয়েছে একাধিকবার। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে এই মামলার নিষ্পত্তি ঘটানো হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা যাওয়ার পর কর্মীদের আশা আরও বেড়েছিল। কিন্তু বারবার শুনানি পিছোনোর ফলে এখন তাদের ধৈর্য প্রায় শেষ।

 রাজ্য সরকারের অবস্থান

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে—

  • বর্তমানে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ডিএর সম্পূর্ণ বকেয়া মেটানোর মতো নয়।
  • কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কর্মীদের পরিস্থিতি এক নয়।
  • তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়।

তবে এই যুক্তি সরকারি কর্মীরা মানতে নারাজ। তাদের দাবি— অর্থনীতি নিয়ে অজুহাত দেখিয়ে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

 কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটি?

এই মামলার রায় শুধু পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের জন্য নয়, গোটা দেশের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ:

  1. কর্মচারী অধিকার বনাম রাজ্য আর্থিক সীমাবদ্ধতা – কোনটা বেশি প্রাধান্য পাবে?
  2. সমান কাজ, সমান বেতন নীতি – আদালত কি এর পক্ষে রায় দেবে?
  3. অন্য রাজ্যের দৃষ্টান্ত – অন্যান্য রাজ্যে যখন কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তখন বাংলায় কেন সম্ভব নয়?

 আগামী সোমবার কী হতে পারে?

সব নজর এখন সোমবারের দিকে। সরকারি কর্মীরা মনে করছেন— আদালত এবার চূড়ান্ত রায় দিতে পারে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি:

সম্ভাবনাকর্মীদের প্রভাবসরকারের প্রভাব
100% ডিএ মঞ্জুরকর্মীদের বড় জয়, আন্দোলনের অবসানসরকারের ওপর বিশাল আর্থিক চাপ
 আংশিক ডিএ মঞ্জুরকর্মীরা আংশিক সন্তুষ্ট, আন্দোলন কিছুটা কমবেসরকার কিছুটা স্বস্তি পাবে
 আবারও বিলম্বকর্মীদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছাবেসরকারের ওপর চাপ আরও বাড়বে

 

ডিএ মামলাকে ঘিরে সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ কম নয়। কারণ:

  • সরকারি কর্মীদের হাতে টাকা এলে রাজ্যের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
  • অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে।
  • অনেকেই বলছেন, ডিএ মামলার রায় রাজ্যের রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

FAQ

Q1. ডিএ কী?
ডিএ বা Dearness Allowance হল এক ধরনের ভাতা, যা কর্মীদের মজুরির সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর উদ্দেশ্য হল বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব থেকে কর্মীদের আয়কে রক্ষা করা।

Q2. কেন পশ্চিমবঙ্গে ডিএ নিয়ে এত সমস্যা?
কারণ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে রাজি নয়। সরকারের দাবি, রাজ্যের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ডিএ দেওয়া হচ্ছে।

Q3. সুপ্রিম কোর্ট কি আগেও নির্দেশ দিয়েছিল?
হ্যাঁ। ১৬ মে ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী নির্দেশে ২৫% বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল।

Q4. কর্মীরা এখন কী চাইছেন?
তাদের মূল দাবি— কেন্দ্রীয় হারে ১০০% ডিএ মিটিয়ে দেওয়া হোক।

Q5. সোমবারের রায়ে কী হতে পারে?
রায় তিনভাবে যেতে পারে— পূর্ণাঙ্গ ডিএ, আংশিক ডিএ, অথবা আবারও বিলম্ব। কর্মীদের আশা, এবার পূর্ণাঙ্গ ডিএর দিকেই রায় যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের কাছে ডিএ মামলা শুধুই একটি আইনগত লড়াই নয়— এটি তাদের জীবিকার লড়াই। তাই দীর্ঘদিন ধরে তারা এই আন্দোলন করে যাচ্ছে । বহু বছর ধরে তারা অপেক্ষা করছেন ন্যায্য পাওনার জন্য। আগামী সোমবারের রায় হয়তো তাদের জন্য আশার আলো নিয়ে আসবে, অথবা আরও হতাশা।

এখন শুধু অপেক্ষা— সুপ্রিম কোর্ট কী সিদ্ধান্ত নেয়!

Leave a Comment